বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এর টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) সিস্টেমের বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। ০৩ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ বিকালে রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত বিএসসিএল এর প্রধান কার্যালয়ে এর উদ্বোধন করেন, মাননীয় পরারাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং বিএসসিএল এর চেয়ারম্যান ড. শাহ্জাহান মাহমুদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, বিপিএএ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জনাব মোঃ সামসুল আরেফিন এবং বিএসসিএল পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত পরিচালকবৃন্দ। আরও উপস্থিত ছিলেন একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড এর সম্মানিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোজাম্মেল বাবু। 

টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) হলো টেলিভিশন চ্যানেল অথবা টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা নির্ধারনের পরিমাপক। বিএসসিএল টিআরপি সিস্টেম একটি বিজ্ঞান ও পরিসংখ্যানভিত্তিক মাধ্যম যা টেলিভিশন চ্যানেল অথবা টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা নির্ণয়ের পাশাপাশি কোন এলাকায়, কখন, কতজন, কোন বয়সের মানুষ, নারী কিংবা পুরুষ কে, কতক্ষণ কোন চ্যানেলে কোন অনুষ্ঠান দেখেছেন তার সকল তথ্য সংগ্রহ করে। এই সকল তথ্যাদি বিএসসিএল কর্তৃক রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পূর্ন সুরক্ষিত থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহিতাগণ তথা টেলিভিশন চ্যানেল এবং এড এজেন্সি তা সরাসরি বিএসসিএল টিআরপি সিস্টেম সেবা হতে গ্রহণ করতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিষয়ক ইন্সটিটিউট, আইএসআরটি (ISRT) এর পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী বিএসসিএল টিআরপি সিস্টেমের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী প্রাথমিকভাবে স্থাপিত ৫০০টি টিআরপি ডিভাইস হতে এই সকল তথ্য দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেল ও টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে (জুম প্লাটফর্মে) যুক্ত থেকে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি বলেন, বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট সেবা প্রদান করতো। তবে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে সেটি তৈরির কথা ভাবা হয়। তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি এই দায়িত্ব বিএসসিএলকে প্রদান করেন। অনেক প্রচেষ্ঠায় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় বর্তমান টিআরপি সিস্টেম দাঁড় করানো হয়েছে। এজন্য তিনি বিএসসিএল এর চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহ্জাহান মাহমুদকে ধন্যবাদ জানান।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাকাডেমিয়া ও সরকারের কোলেবরেশনে তৈরি বর্তমান বিএসসিএল এর টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) সিস্টেমটি বেশ উন্নত। এমন একটি সিস্টেম তৈরির জন্য তিনি বিএসসিএলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক এমপি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশিয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরিকৃত চমৎকারভাবে এমন একটি টিআরপি সিস্টেম তৈরির কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ। এই সিস্টেম ধীরে ধীরে আরও উন্নত হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বিএসসিএল এর চেয়ারম্যান ড. শাহ্জাহান মাহমুদ বলেন, বিএসসিএল এর পক্ষ থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে গবেষণার ফল আজকের টিআরপি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বর্তমানে টেলিভিশনে কোন টেলিভিশন চ্যানেল দেখা হচ্ছে, কতক্ষণ ধরে দেখা হচ্ছে এবং কে কে টেলিভিশন দেখছে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যাদি নিয়ে গাণিতিক বিশ্লেষণ করে টেলিভিশন চ্যানেলের জনপ্রিয়তার তথ্য সেবাগ্রহীতাদের প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একটি কার্যকর টিআরপি সিস্টেম চালু করার জন্য বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) কে দায়িত্ব প্রদান করে। প্রাথমিকভাবে বিএসসিএল হতে এই টিআরপি কার্যক্রমের জন্য বৈদেশিক সিস্টেম ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়। তবে এসকল বৈদেশিক সিস্টেম অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সকল সেবা গ্রহিতার মাসিক ফী বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিল।

এর প্রেক্ষিতে, বিএসসিএল-এর চেয়ারম্যান ড. শাহ্জাহান মাহমুদ-এর নেতৃত্বে বিএসসিএল-এর কারিগরি, গবেষণা ও পরিকল্পনা বিভাগ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে একটি টিআরপি সিস্টেম প্রস্তুত করেছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে সিস্টেমটি প্রস্তুতির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় হ্রাস এবং সকল সেবা গ্রহিতার মাসিক ফী তুলনামূলক কম রাখা সম্ভবপর হয়েছে। বিএসসিএল-এর টিআরপি সিস্টেম প্রধান ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক জনাব এস এম আনোয়ারুল আজিজ জানান যে, “উদ্ভাবিত টিআরপি সিস্টেমটি ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন-এর মাধ্যমে বিএসসিএল এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ যৌথভাবে প্রস্তুত করেছে। ইতিমধ্যে সিস্টেমটি বাংলাদেশ এর টিভি চ্যানেল ও বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে এবং ২৯ টি টিভি চ্যানেল ও ০১টি বিজ্ঞাপনী সংস্থা ইতোমধ্যে টিআরপি তথ্য পাওয়ার জন্য বিএসসিএল এর সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি স্মাক্ষর করেছে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এর শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ, টিআরপি সিস্টেম উন্নয়ন ও পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা সহ এবং বিএসসিএল এর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিএসসিএল এর পরিচিতি

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট এই প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ও এর ০২ (দুই) টি গ্রাউন্ড স্টেশন পরিচালনা, দেশের পরবর্তী স্যাটেলাইটসমূহ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা, বিক্রয় ও বিপণন কার্যক্রম, গবেষণা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং স্যাটেলাইট সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোম্পানির ভিশন হলো স্যাটেলাইট ও সংশ্লিষ্ট সেবায় স্বনির্ভরতা অর্জন। আর কোম্পানির মিশন হলো গবেষণা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক স্থাপন, পরিচালনা, সেবা প্রদান এবং স্যাটেলাইট সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। বর্তমানে দেশের সরকারি ৪টি (চার) টিভি চ্যানেলঃ বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, বিটিভি চট্টগ্রাম ও সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং দেশের সকল বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিএস-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দেশের একমাত্র ডিটিএইচ সেবা “আকাশ ডিটিএইচ” সম্প্রচারিত হচ্ছে।টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইন্টারনেট/ ভার্চুয়াল সংযোগ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে।  প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের পরবর্তী স্যাটেলাইট (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২) মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিএসসিএল।